টিন সার্টিফিকেট কী? কিভাবে বাতিল করবেন টিন সার্টিফিকেট
![]() |
| চিত্রঃ টিন সার্টিফিকেট (সংগৃহীত) |
টিন সার্টিফিকেট কি?
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক ব্যক্তি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত একটি অনন্য আলফানিউমেরিক কোড হলো টিআইএন। এটি সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কর আদায়ের লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সনাক্তকরণ ব্যবস্থা। এই কোডসহ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম এবং কাজের ধরণ সম্বলিত নথিপত্রকেই টিন সার্টিফিকেট বলা হয়।
এটি সরকারকে সঠিক রেকর্ড রাখার পাশাপাশি করদাতার তথ্য নিরীক্ষা ও কর সংগ্রহে সহায়তা করে। আপনি যদি কর্মচারী, স্ব-নিযুক্ত পেশাদার বা ব্যবসার মালিক হন, তাহলে ট্যাক্স সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা পূরণের জন্য টিন সার্টিফিকেট অপরিহার্য।
টিন সার্টিফিকেট বাতিলের পূর্বশর্ত
১. যাদের কর রিটার্ন দাখিলের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
২. মৃত্যু, অবসায়ন বা অনুরূপ কোনো কারণে করদাতা অস্তিত্বহীন হলে।
৩. করদাতা স্থায়ীভাবে বাংলাদেশ ত্যাগ করলে এবং বাংলাদেশে তার আয়ের কোনো উৎস না থাকলে।
৪. ডুপ্লিকেট বা একাধিক নিবন্ধন বা ভুল তথ্য সম্বলিত নিবন্ধন পেলে।
৫. আইনি মর্যাদায় কোনো পরিবর্তন এলে।
৬. অন্য কোনো আইনানুগ কারণে টিন নিবন্ধন বাতিলের প্রয়োজন হলে।
কারা টিন সার্টিফিকেট বাতিল করতে পারবেন
যদি কারও আয় করযোগ্য সীমার নিচে থাকে, তাহলে তিনি টিন সার্টিফিকেট বাতিলের আবেদন করতে পারেন।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে করযোগ্য আয়ের সীমা:
-
সাধারণ করদাতা: বছরে ৩,৫০,০০০ টাকা
-
মহিলা ও ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব করদাতা: বছরে ৪,০০,০০০ টাকা
-
প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গ করদাতা: বছরে ৪,৭৫,০০০ টাকা
-
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা: বছরে ৫,০০,০০০ টাকা
-
যদি আয়ের পরিমাণ কম থাকলেও অন্য কোনো প্রয়োজনে টিন সার্টিফিকেট করা হয়ে থাকে এবং পরবর্তীতে সেটির প্রয়োজন না থাকে, তাহলে এটি বাতিল করা যায়।
-
মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে টিন বাতিলের দায়িত্ব উত্তরাধিকারীদের উপর বর্তায়।
-
বিদেশে স্থায়ীভাবে অবস্থানরত ব্যক্তিরা বাংলাদেশে করযোগ্য আয় না থাকলে টিন বাতিল করতে পারেন।
-
ভুল তথ্য বা ডুপ্লিকেট টিন থাকলেও এটি বাতিল করতে হবে।
টিন সনদ বাতিলের জন্য প্রথম শর্ত হচ্ছে, পরপর তিনটি অর্থবছর শূন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল করা। প্রতি বছর রিটার্ন জমা দেওয়ার পর কর অফিস থেকে প্রাপ্তি স্বীকার পত্র সংগ্রহ করতে হবে। এই তিনটি বছরের স্বীকার পত্র সংরক্ষণ করতে হবে ভবিষ্যতের জন্য।
কর অফিসে সরাসরি আবেদন:
তৃতীয় বছরের শূন্য রিটার্ন জমা দেওয়ার পরপরই সংশ্লিষ্ট কর সার্কেল অফিসে উপস্থিত হয়ে উপ-কর কমিশনার বরাবর আবেদন করতে হবে। আবেদনে টিন সনদ বাতিলের কারণ সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করতে হবে। আবেদনপত্রের সঙ্গে বিগত তিন বছরের কর রিটার্নের প্রাপ্তি স্বীকার পত্র, টিন সনদের কপি এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সংযুক্ত করতে হবে।
এখানে উল্লেখযোগ্য, টিন সনদধারী ব্যক্তি যদি নিজে আবেদন করতে না পারেন, তাহলে তার পক্ষ থেকে যে কেউ আবেদন জমা দিতে পারবেন। তবে প্রতিনিধি হিসেবে আবেদন জমা দিলে অবশ্যই প্রমাণস্বরূপ প্রতিনিধির জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি সঙ্গে রাখতে হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
জাতীয় পরিচয়পত্র ও এর ফটোকপি
পর পর তিন অর্থ-বছরের শূন্য কর রিটার্নের প্রাপ্তি স্বীকারপত্রের ফটোকপি
আবেদনের ধাপসমূহ:
১. টানা তিন বছর শূন্য রিটার্ন দাখিল করুন।
২. প্রতিবারের রিটার্ন দাখিলের প্রাপ্তি স্বীকারপত্র সংরক্ষণ করুন।
৩. তৃতীয় বছরের শেষে উপ-কর কমিশনার বরাবর আবেদন লিখে জমা দিন।
দ্রষ্টব্য: করদাতা চাইলে প্রতিনিধি মারফতও আবেদন জমা দিতে পারবেন।

